• রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন

খুলনার দাকোপে মিষ্টি পানির তীব্র সংকটে তরমুজ চাষ ব্যাহত হচ্ছে

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ১০২
বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
Oplus_131072
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

 

সরকারিভাবে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় অধিকাংশ কৃষকের অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে সার ও কীটনাশক

আঃ হাকিম, বিশেষ প্রতিনিধি

খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল তরমুজ।এ বছর অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কৃষকরা উৎপাদন করছে সুস্বাদু এই অর্থকরী গ্রীষ্মকালীন ফলটি। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর দেশের অধিকাংশ জেলায় এই মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ বাজারজাত হয়। যার স্থানীয় বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা। প্রতি মৌসুমে ১৫শ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার তরমুজ স্থানীয় কৃষকেরা বিক্রি করে । যা দাকোপ সহ খুলনার অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু এ বছর বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কৃষকদের তরমুজ চাষ করতে হচ্ছে। সরেজমিনে বেশ কিছু কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেক বেশি মুল্যে কিনতে হচ্ছে সার ও কীটনাশক। এ অঞ্চলের অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে মিস্টি পানির তিব্র সংকট । ফলে সেচের অভাবে আশানুরূপ বড় হচ্ছে না তরমুজ। কৃষকেরা আরো বলেন, প্রতি বিঘা তরমুজ চাষে এক মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করা যায়। কিন্তু এবছর সার ও কীটনাশক সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি থাকায় ও বিকল্প উৎস থেকে কিছুটা সেচ ব্যবস্থা করায় বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।অপরদিকে মিষ্টি পানির তীব্র সংকট হওয়ায় ও যথাযথ সেচ না দিতে পারায় ফলন কমেছে প্রায় অর্ধেক। ফলে এ বছর তরমুজ উৎপাদনে কৃষকেরা লাভ নিয়ে শংকিত ।

এ বিষয়ে দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন,এ বছর মোট ৮ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে দাকোপের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১০০ টি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং মিষ্টি পানির রিজার্ভ না থাকায় সেচ সংকটে ভুগছে কৃষকেরা। আমি খাল গুলোর যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আশা করছি আগামী মৌসুমে খাল গুলো খননের মাধ্যমে মিষ্টি পানির সংকট অনেকটা সমাধান হবে। অতিরিক্ত দামে কৃষকেরা সার ও কীটনাশক কিনছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধিকাংশ কৃষকেরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত সারের পরিমাণের দ্বিগুণ সার তরমুজ উৎপাদনে ব্যবহার করছে যার কোন প্রয়োজন নেই । ফলে স্থানীয় বাজারে কিছুটা সংকট কৃত্রিমভাবেই তৈরি হয়েছে। আবার অনেক কৃষকেরা বিভিন্ন দোকান থেকে বাকিতে সার ও কীটনাশক ক্রয় করে যার কারণে অনেক সময় ওই সব দোকানিরা সুযোগ নিয়ে নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে বেশি নিতে পারে। তবে আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ এখনো আসেনি।এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি ব্যাংক কৃষকদের তরমুজ উৎপাদনে ঋণ সহায়তা প্রদান করে কিনা এমন প্রশ্ন জবাবে তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংক স্থানীয় কৃষকদের ঋণ সহায়তা প্রদান করে কিনা এমন কোন তথ্য আমার কাছে নাই।

তরমুজ উৎপাদনে কৃষকদের ঋণ সহায়তা প্রদান করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দাকোপ উপজেলার কৃষি ব্যাংক দাকোপ শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ মাছুম বিল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দাকোপ শাখা থেকে ২০২৪/২৫ অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট ৮৬৩ টি কৃষি ঋণের মাধ্যমে ১৭ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে যার অধিকাংশই তরমুজ চাষে ব্যবহার হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসমত হোসেন বলেন, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলার আভ্যন্তরীণ খাল গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ইতোপূর্বেই জেনেছি এবং বিভিন্ন ফোরামে মিষ্টি পানির রিজার্ভ ও দ্রুত খালগুলো সংস্কারের বিষয়ে কথা বলেছি। দ্রুত সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা , এলজিইডি খুলনা, জেলা প্রশাসক খুলনাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করেছি। বিভিন্ন এনজিওর সাথেও কথা বলেছি। আশা করছি পর্যায়ক্রমে খাল গুলো সংস্কারের মাধ্যমে ও বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের রিজার্ভার তৈরি করার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান হবে।


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন