• শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

পাবিপ্রবিতে নেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, হয় না সঠিক কাউন্সিলিং

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন
মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৫২
রবিবার, ১২ মে, ২০২৪
পাবিপ্রবিতে নেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, হয় না সঠিক কাউন্সিলিং
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৯১১৬৫২৫৭০ (হোয়াটসঅ্যাপ)

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠার এক যুগ পার করলেও এখন পর্যন্ত কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে মানসিক স্বাস্থ্যের উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে প্রায়ই জটিল সমস্যায় ভোগেন শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্যে ক্যাম্পাসে একটি মেডিকেল সেন্টার থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য নেই কোনো কাউন্সিলিং সেন্টার। এতে করে যে সকল শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে ভুগছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে কোনো চিকিৎসা নিতে পারছেন না।

সেশন জটের কারণে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ইতিহাস বিভাগের দুই শিক্ষার্থী ফেসবুকে আত্মহত্যার হুমকি দেন। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পারিবারিক সমস্যার কারণে পাবনা শহরের একটি মেসে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদুর রহমান জামিল আত্মহত্যা করেন। গত ২৫ মার্চ স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে শারভিন সুলতানা নামের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী পাবনা শহরের মনসুরাবাদ এলাকায় আত্মহত্যা করেন। সর্বশেষ গত শনিবার ৪ মে আইসিই ডিপার্টমেন্টের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রিফাত সরকার নামে এক শিক্ষার্থী ড্রপ আউটের সংশয় থেকে আত্মহত্যার করতে যায় কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যান। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চলমান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও সঠিক কাউন্সিলিংয়ের দাবি আবারও প্রকাশ্যে এসেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যক্তিগত ও পরিবার জীবন, পড়াশোনা ও পরীক্ষার মানসিক চাপ, র‍্যাগিংয়ের শিকার হওয়া, জুনিয়র কর্তৃক সিনিয়র লাঞ্ছিত হওয়াসহ পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে বিভিন্ন সময়ে জীবনে হতাশা চলে আসে। দীর্ঘদিন ধরে এই হতাশা চলতে থাকলে এটি মানসিক রোগের আকার ধারণ করে। তখন রোগ নিরাময়ের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকার কারণে দিনের পর দিন তাদেরকে অসুস্থ জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দিতে না পারলেও শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যাসহ যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালকের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ টি বিভাগ থেকে ২১ জন শিক্ষককে সহকারী ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য কাজ করছেন।

তবে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২১ জন সহকারী ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হলেও সেটি কাজে আসছে না। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যার জানেনই না ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের কাজ কি বা শিক্ষার্থীদের কল্যাণের তাদের ভূমিকা কি হতে পারে।

তারা আরও বলেন, একজন ডাক্তারের কাজ একজন শিক্ষক দিয়ে সম্ভব না। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিং সেন্টার খোলা কিংবা মেডিকেল সেন্টারে একজন কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন সহকারী ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা বলছেন, একজন ডাক্তারের কাজ একজন শিক্ষককে দিয়ে হয় না। আমরা হয়তো কিছু সময়ের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ভালো রাখতে পারি, কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান দিতে পারি না। শিক্ষার্থীরাও বুঝে আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের মানসিক সমস্যার সমাধান দিতে পারবো না। এই কারণেই হয়তো তারা আমাদের কাছে আসেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী মানসিক রোগে ভুগছেন। আমারও মাঝে মাঝে অকারণে মন খারাপ হয়, পড়াশোনায় মন বসে না, কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। ক্যাম্পাসে যদি কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকতো তাহলে হয়তো তাকে সমস্যাগুলো বললে তিনি এর একটা সমাধান দিতেন।

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হক সীমান্ত বলেন, আমরা চাইলেই নিজের ব্যক্তিগত সকল সমস্যার কথা একজন শিক্ষককে বলতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকলে তার কাছে মনের কথা খুলে বলতে পারি। তা ছাড়া একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আমার মূল সমস্যা আইডেন্টিফাই করতে পারবেন যা একজন শিক্ষক কখনই পারবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালক ড. নাজমুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে মানসিক সমস্যা নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসেন না। আর্থিক সমস্যা নিয়েই বেশি শিক্ষার্থী আসেন। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে আমিও মনে করি এখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা প্রয়োজন। এই বিষয়টি আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি, আশা করি প্রশাসন দ্রুত একটা সমাধান দিবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন,‘কাউন্সিলিং সেন্টার খোলা বা কাউন্সিলর নিয়োগ করা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য পাক্ষিক বা মাসিক কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করবো। এ নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই সবাই এর বাস্তবায়ন দেখবে।’


আরও সংবাদ

জরুরি হটলাইন