নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জামুহালী চশমায়ে দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারীর পাঁচটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ওই মাদ্রাসায় এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্রার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে আসার পর হঠাৎ করেই সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসার মূল ফটকে পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ টাঙানো হয়। এ সময় মাদ্রাসায় শুধু একজন নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারী কেউ ছিলেন না। পরীক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফিরে গেছেন।
এদিকে উপাধ্যক্ষসহ এ পদগুলোতে নিয়োগে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় ৭০ লাখ টাকার ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়।
একে ‘পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা’ বলে দাবি করেন বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুহুল আমিন। তিনি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে পরীক্ষার আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার মূল ফটক বন্ধ। সেখানে নোটিশ টাঙানো রয়েছে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে এতদ্বারা এত জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে।
মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় আসেননি। তিনি সকাল ৯টার একটু আগে আমাকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ পাঠিয়েছেন। আমি সকাল ৯টায় মাদ্রাসার মূল ফটকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছি। পাঁচটি পদের পরীক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় এসে অপেক্ষা করে চলে গেছেন। আমি ছাড়া অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা মাদ্রাসায় আসেননি।
জামুহালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে ফেরদাউস হোসেন অফিস সহকারী পদে আবেদন করেছেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বড়তারা ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনকে প্রায় দুই বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি নিয়োগ পরীক্ষার দুই দিন আগে আমার কাছে অফিস সহকারী পদের জন্য ১৬ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে চেয়ারম্যানকে বলেছি। তখন চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, টাকা যার চাকরি তার।’
জামুহালী গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে সৌরভ হোসেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করেছেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে আমার ১৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিল। দুই মাস আগে প্রথমে অধ্যক্ষ সাহেব আমাকে দাতা সদস্য মতিউর রহমানকে আড়াই লাখ টাকা দিতে বলেছিলেন। অধ্যক্ষের কথা মতো তাকে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। এরপর নিশ্চিন্তা বাজারের একটি রড- সিমেন্টের দোকানে বসে অধ্যক্ষ সাহেব আমার কাছে সাড়ে সাত লাখ টাকা নিয়েছেন। মোট ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন ওই পদে আরও বেশি টাকা পেয়ে অধ্যক্ষ সাহেব আমার ছেলেকে নিয়োগে গড়িমসি করছেন।’
বড়তারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন লতিফ বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজনের দাবি করছি। যারা ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তবে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বড়তারা ইউপি চেয়ারম্যান ও জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘মাদ্রাসায় জনবল নিয়োগে কারও কাছে একটি টাকাও নেওয়া হয়নি। কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। ডিজির প্রতিনিধি আসেননি। এ কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’
ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মো. রেজাউল করিম বলেন উপাধ্যক্ষসহ পাঁচটি পদে মোট ৪৮ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় পাঁচটি পদে মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ডিজির প্রতিনিধি আসছেন না বলে জানানোর পর পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ক্ষেতলাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছফিউল্লাহ সরকার বলেন, জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষসহ পাঁচটি পদে নিয়োগের ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের কথা জেনেছি।